
প্রত্যেক সক্ষম নারীর জীবনে গর্ভাবস্থা একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। গর্ভাবস্থায় সব কিছু স্বাভাবিক হলেও শারীরিক ও মানসিক ভাবে এই সময় কিছু পরিবর্তন ঘটে।এই কারনে গর্ভবতী মহিলারা এই সময়ে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে এই সমস্যা গুলোর কারনে চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা গুলোর সমাধান সহজেই করতে পারি।
অধিকাংশ গর্ভবতী মায়েরা সাধারনত যেসব শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন, তেমন কিছু বিষয় হলঃ
১। বমি বমি ভাব
২। অম্লতা/ বুকে জ্বালা পোড়া ভাব
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য
৪। অর্শ/ পাইলস
৫। ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া
৬। মাংস পেশির খিচ এবং পায়ের নিচের অংশে ব্যথা
৭। পায়ের নিচের অংশে ভেইন বা শিরাগুলোর স্ফীত/ ফুলে উঠা
৮। পিঠে ব্যথা
এবার আলোচনা করা যাক কি ভাবে গর্ভবতী মায়েদের শরীরের যত্ন নিতে হবে
বমি বমি ভাব
গর্ভবতী মায়েরা সাধারনত দিনের শুরুতে বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারেন। এটি গর্ভ ধারনের প্রাথমিক লক্ষন হিসেবে বলা যেতে পারে। গর্ভ ধারন কালে দিনের যে কোন সময়ে এই ধরনের অনুভূতি হতে পারে। গর্ভবতী মায়েরা এই সময়ে কিছু খেতে পারেন না। এমন কি তারা কোন খাবারের গন্ধ ও সহ্য করতে পারেন না।
চিকিৎসাঃ
- বার বার কিন্তু স্বল্প পরিমানে খাবার খেতে হবে।
- ঘুম থেকে উঠার পর পরই শুকনো খাবার খাওয়া যেতে পারে, যেমন – টোষ্ট বিস্কুট।
- যদি এই ধরনের অবস্থা তিন মাসের বেশী থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
অম্লতা/ বুকে জ্বালা পোড়া ভাবঃ
প্রজেস্টেরন হরমোন এর অতিরিক্ত নিঃসরণের কারনে এই সময় অম্লতা/ বুকে জ্বালা পোড়া ভাবের সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসাঃ
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।
- খাবার খাওয়ার সময় অল্প পরিমানে পানি খেতে হবে।
- দুই বেলা খাবারের মধ্যবর্তী বিরতির সময়ে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে এনটাসিড জাতীয়/অম্লনাশক ওষুধ খাওয়া পারা যেতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ
প্রজেস্টেরন হরমোন এর অতিরিক্ত নিঃসরণের কারনে এই সময় গর্ভবতী মায়েরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারেন। যা পরবর্তীতে অর্শ বা পাইলস রোগের সৃষ্টি করে।
চিকিৎসাঃ
- পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে ( প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস)।
- আঁশ যুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে, যেমন – শাক সবজি, ফলমূল, ডাল, শস্য জাতীয় খাবার, গম ইত্যাদি।
- নিয়মিত হাঁটতে হবে।
- অস্থায়ী ভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সাপোজিটর ব্যবহার করা যেতে পারে।
অর্শ বা পাইলসঃ
গর্ভবতী মায়েরা যদি দীর্ঘদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন, তাহলে এর ফলে অর্শ বা পাইলস রোগের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মল ত্যাগের সময় রক্তনালী ফেটে যায় এবং রক্তক্ষরণ হয়।
চিকিৎসাঃ
- প্রতিদিন কিছুক্ষন ব্যায়াম করতে হবে।
- আঁশযুক্ত খাবার এবং প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে কোন প্রকার ক্রিম বা সাপোজিটর ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়াঃ
গর্ভকালীন সময়ে জরায়ু আকারে বৃদ্ধি পায়। আকারে বৃদ্ধি প্রাপ্ত এই জরায়ু মুত্র থলির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। যে কারনে মুত্র থলি পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই বার বার প্রস্রাব পেতে থাকে।
চিকিৎসাঃ
- প্রস্রাবে কোন প্রকার সংক্রমণ হচ্ছে কিনা তা বুঝার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করা জরুরী।
- গর্ভবতী মা ডায়াবেটিস এ ভুগছেন কিনা তা পরীক্ষা করা উচিত।
পায়ের নিচের অংশে ব্যথাঃ
গর্ভবতী মায়েরা গর্ভকালীন সময়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে সাধারনত রাতের বেলায় পায়ে হাটুঁর নিচের কাফ মাংস পেশীতে ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
চিকিৎসাঃ
- রাতে ঘুমানোর পূর্বে কাফ মাংস পেশীর ব্যায়াম করতে হবে।
- পায়ের আংগুল গুলোকে হাটুঁর দিকে মুখ করে নাড়াতে হবে, এর ফলে কাফ মাংস পেশী প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
পায়ের নিচের অংশে ভেইন বা শিরা গুলোর স্ফীত হয়ে ফুলে উঠাঃ
সম্প্রসারিত জরায়ু শরীরের নিচের অংশে শিরা গুলোতে রক্ত চলাচলে এ বাধার সৃষ্টি করে, যার ফলে হাটুঁর নিচের পিছনের (কাফ) মাংসপেশীতে স্থায়ী ভাবে বর্ধিত বা স্ফীত শিরার সমস্যা দেখা দেয়।
চিকিৎসাঃ
- কোনো স্থানে দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকা যাবে না।
- হাঁটাহাটির অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- বিশ্রাম নেবার সময় আপনার পা একটু উচুঁ স্থানে রাখতে হবে ।
পিঠে ব্যথা:
গর্ভকালীন সময়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় । অস্থিসন্ধির জোড়াগুলি আলগা হয়ে পড়ে। যে কারণে গর্ভবতী মায়েরা পিঠে ও কোমরে ব্যথা অনুভব করেন।
- হাঁটাহাটি ও বসে থাকার সময় মেরুদন্ড সোজা রাখতে হবে।
- দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা হাটাহাটির বদলে বিছানায় বিশ্রাম নিতে হবে।
- হাই হিলের (উচুঁ জুতা) পরা এড়িয়ে চলতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ।