
দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দৈনিক লক্ষাধিকবার ডায়াবেটিস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ একই ভুল করে। এখানে, সবচেয়ে প্রচলিত ৫টি ভুল এবং তার সম্ভাব্য সমাধান দেয়া হল।
ভুল # ১: ‘‘শুধু খাবারই ব্লাড সুগারে প্রভাব ফেলে’’-এমন চিন্তা করা
কার্বহাইড্রেট এবং ক্ষুদ্র পরিমানে ফ্যাট ও প্রোটিন রক্তের সুগারের ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্ত তা খাবারকে ডায়াবেটিসের মুল কারন হিসেবে চিন্হিত করে না। খাবার হল অনেক কারনের মাঝে একটি।
- স্ট্রেস – সাধারনত কোন প্রকার ব্যথা থেকে অথবা প্রিয়জনের সাথে ঝগড়ার ফলে বা তীব্র ব্যায়ামের ফলে হয়। এই স্ট্রেস রক্তের সুগার বৃদ্ধি করে।
- এক্টিভিটি বা ব্যায়াম মুলত রক্তের সুগার কমায়। কিন্ত অনেক প্রকার ব্যায়াম যেমন, স্ট্রেন্থ-ট্রেইনিং বা স্প্রিনিং রক্তের সুগার বাড়াতে পারে। যে সকল ব্যায়াম আপনার শরীরের উপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করে। সেই সকল ব্যায়াম রক্তের সুগারও বৃদ্ধি করে। ধরেন, যদি প্রতিদিন ২০ মিনিট হালকা হাটাচলাই আপনার ব্লাড সুগার বৃদ্ধি করে এবং সম্প্রতি আপনি তেমন কিছু খাননি তাহলে, আপনি ডাক্তারের কাছে যান এবং আপনার স্ট্রেস টেস্ট করুন। এটি হৃদরোগের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। আপনার এই মানসিক চাপের পেছনে কোন না কোন কারন আছে।
- ঘুমানোর ধরন সারাদিনে আপনার ইনসুলিন সেনসিভিটি পরিবর্তন করতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব আপনাকে আরও ইনসুলিন প্রতিরোধী করে তোলে এবং এতে ব্লাডে সুগারের পরিমান প্রচুর বৃদ্ধি পায়।
- হরমোনাল পরিবর্তনও আপনার ব্লাড সুগার উঠা নামার কারন হতে পারে। এই সকল হরমোন স্ট্রেস, হরমোনের-বৃদ্ধি, মেনস্ট্রাশন এবং মনোপোজ থেকে তৈরি হয়। যদিও, আপনি জানলেন যে কেন আপনার ব্লাডসুগার পরিবর্তন হয়। তবুও খাবার ব্যতিত অন্য বিষয়গুলিকে দেখাটা মুশকিলই বটে!
ভুল # ২: নিজের ব্লাড সুগার সম্পর্কে অনুমান করা
মানুষ নিজের ব্লাড সুগার সম্পর্কে অনুমান করতে ভয়ানক পারদর্শী। মুল সমস্যা হল যে উচ্চ এবং নিম্ন ব্লাড সুগারের উপসর্গগুলো সবসময় একরকম থাকে না। আপনি কি ঘামছেন এবং ক্ষুদার্ত কারন আপনার ব্লাড সুগার কমে গেছে, নাকি বাইরে ৯০ডিগ্রী তাপমাত্রা এবং আপনি সকালে নাস্তাও করেননি? আপনি কি খিটখিটে হয়ে আছেন কেননা আপনার ব্লাড সুগার বৃদ্ধি পেয়েছে নাকি আপনার কোন বন্ধু আপনাকে বিরক্তিকর কোন কথা বলেছে? সাইকেলে ব্যায়াম করার সময় নিম্ন ব্লাড সুগারের উপসর্গগুলি থেকে টিভি দেখার সময়ের নিম্ন ব্লাড সুগারের উপসর্গগুলি অনেক আলাদা হয়। আপনি যদি নিশ্চিত জানতে চান আপনার শরীরের ভিতরে কি হচ্ছে, তাহলে সম্পূর্ণ পরীক্ষার জন্য একটি ব্লাড গ্লুকোজ মিটার (blood glucose meter) ব্যাবহার করুন।
ভুল # ৩: কার্ব (Carb) এর পরিমান ধারনা করা
খাবারের প্রোটিনে কি পরিমান কার্বহাইড্রেট আছে এটি অনুমান করা অত্যন্ত কঠিন। গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা অনেক ভাগ্যবান কেননা শতকরা ৫০ ভাগ সময়ই আমাদের ধারনা সঠিক হয়ে থাকে। যতদিন না পর্যন্ত আপনি অনুমান করতে পারছেন যে কোন খাবারটি আপনার ব্লাড সুগারে প্রভাব ফেলে ততদিন পর্যন্ত খাবারের উপরের লেবেল পড়ে এবং খাবার পরিমান করে আহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি বিশেষভাবে সেই সকল খাবারের জন্য উল্লেখযোগ্য যাতে কার্ব লুকিয়ে থাকে। উদাহরনস্বরূপ বিভিন্ন প্রকার সস, এগুলি ঘন করার জন্য খুব সহজ কার্বহাইড্রেট যেমন কর্ণ স্টার্চ ব্যাবহার করা হয়। যদিও এটি কেবল আপনার প্লেটে হালকা পরিমানে থাকে, তার মানে এই নয় যে এই সসের মাঝে ১৫ গ্রাম চিনি থাকতে পারে না।
ভুল # ৪: নিজের সাফল্যের জন্য দায়িত্বগ্রহন না করা
মেডিকেল টিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্ত তারা আপনার জন্য আপনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আপনি আপনার সময়ের শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ আপনার নিজের জন্য ব্যায় করেন। অতএব, আপনার ডায়াবেটিসের দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে। পর্যালোচনা করুন কোন বিষয়গুলি আপনার ব্লাড সুগারের পরিবর্তন করছে। জানুন কিভাবে আপনার খাদ্যভাস, ঔষধ এবং কার্যকলাপ এই তিনটি জিনিস একসঙ্গে সমন্বয় হবে। আপনার মেডিকেল টিম আপনাকে চাপ দিবে এটি আশা করার পরিবর্তে আপনিই আপনার মেডিকেল টিমকে উৎসাহ দিন। সবার শেষে এটি বলা যায় যে, এই জীবন আপনার, আপনাকেই এই জীবন সুন্দর করে তুলতে হবে।
ভুল # ৫: চরম অবস্থা গ্রহন করাঃ পরিপূর্ণতা বা ব্যর্থতা
ডায়াবেটিস মানে পূর্ণবেগে দৌড়ানো নয়, এটি মুলত সহ্যশক্তির পরীক্ষা। পরিপূর্ণতার জন্য খুব কঠিন চাপ দিলে তা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। আবার সবকিছু ছেরে দিলে দুর্যোগ নেমে আশা নিশ্চিত। তাই এই অবস্থায় একটি মধ্যম পথ অবলম্বন করে আপনার পরিচালনা প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে। যেটি আপনার জন্য ভালো সেটিই করতে হবে এবং নিজেকে মানুষ হয়ার জন্য ক্ষমাও করতে হবে- কেননা আমরা কেউই পারফেক্ট নই!!
সুতরাং ডায়াবেটিস নিয়ে অতি ভিতি বা ভুল ধারনায় পরিচালিত না হয়ে সঠিক বিষয় জেনে জীবন যাপন করলে ভাল থাকা সম্ভব।