
সফলতাকে অনেক ভাবেই সংজ্ঞায়িত করা যায়। প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজস্ব দৃষ্টি ভঙ্গির আলোকে সফলতাকে বিচার করে থাকেন। মূলত একটি সুখী এবং পরিপূর্ণ জীবনকেই সফল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।
১। জীবনের আপনার উদ্দেশ্য কি, তা জানুনঃ আমাদের জীবনের আসলে মূল উদ্দেশ্য কি, তা আমাদের জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন ধরনের কাজ আমাদেরকে আনন্দ প্রদান করছে বা আত্মতৃপ্তি প্রদান করছে, আত্ম জিজ্ঞাসার মাধ্যমে আমরা তা উপলব্ধি করতে এবং জানতে পারি।
২। জীবনকে একজন পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিকোণ হতে দেখুনঃ জীবনকে পর্যবেক্ষনের যে অনন্য সাধারন ক্ষমতা আমাদের রয়েছে, এর মাধ্যমেই আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে কোন কাজের প্রতি আমরা বেশী আগ্রহী এবং কোন কাজের প্রতি আমরা আগ্রহী নই। জীবনকে যদি আমরা পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করতে চাই, তাহলে অবশ্যই নিজের জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, দৃষ্টিভঙ্গী এসব বিষয়ে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩। জীবনে বড় লক্ষ্য স্থির করুনঃ জীবনে একটি বড় লক্ষ্য স্থির করা, আপনাকে বৃহৎ ভাবে প্রেরনা প্রদান করবে। কারন আমাদের মন সচেতন বা অচেতন ভাবে, সবসময় আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের দিকে ধাবমান থাকে। স্বাস্থ্য, সম্পদ বা সম্পর্ক, যে কোন বিষয়েই আমরা আমাদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে পারি এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা নিতে পারি।
৪। নিজেকে প্রতিদিন অনুপ্রানিত করুন: অনুপ্রেরণা আমাদেরকে জীবনের প্রতিদিনের ছুড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে।আমাদের নিজেকে প্রতিদিন অনুপ্রানিত করতে হবে এবং এটি আমাদেরকে লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।এই ভাবে আমরা নিজেদেরকে আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করার মত যোগ্য ও সামর্থ্যবান করে তুলতে পারব।
৫। নিয়মিত পড়ুন: বর্তমানে আমরা যে সমস্যা গুলোর মুখোমুখি প্রতিদিন হচ্ছি, সেগুলো ইতিপূর্বেও অনেকেই মোকাবেলা করেছেন এবং তারা এগুলোর সমাধানেও সক্ষম হয়েছেন। এসব সমস্যা গুলোর সমাধান নিয়ে কিছু বইপত্রও লেখা হয়েছে। আপনি যা উপার্জন করছেন তার ৫-১০ ভাগ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক বই, প্রশিক্ষণ কর্মশালা বা আত্মউন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে বিনিয়োগ করুন, আপনি দেখে বিস্মিত হবেন যে,এই বিনিয়োগের ফলাফল আপনি কিভাবে আপনার ব্যাঙ্ক ব্যালান্সকে ঊর্ধ্বগতিতে নিয়ে যাচ্ছে!
৬। জনসম্মুখে কথা বলতে শিখুন: জনসম্মুখে কথা বলতে পারা হলো আপনার ইতিবাচক আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার একটি দ্রুততম পদ্ধতি। নতুন কিছু জানা এবং শেখার জন্য এটি একটি দারুন পদ্ধতি। যেসব বাক্তিরা জনসম্মুখে আত্মবিশ্বাস এবং আস্থার সাথে কথা বলতে পারেন, তারা কর্মজীবনেও দ্রুত পদোন্নতি অর্জন করেন। দেখা যায় অনেক বিদ্যান এবং জান্তা লোক যিনি শিক্ষা জীবনে অনেক সাফল্যের অধীকারী, জনসম্মুখে কথা বলতে একেবারেই অপ্রস্তুত।
৭। দীর্ঘসূত্রতা করবেন না: সময় আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমরা আগামীকালের জন্য এটি সংরক্ষণ করতে পারব না।এটি আমাদের উপর নির্ভর যে আমরা সময়কে কিভাবে অতিবাহিত করতে চাই, অর্থবহ কর্মকান্ডে নাকি অর্থহীনভাবে; পরিকল্পিত ভাবে নাকি যেনতেনভাবে। কোনো কাজ শুরুর জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় না থেকে আমাদের কর্মপন্থার মাধ্যমে যথাযথ সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে এবং আমাদের কর্মপন্থাই আমাদের ভবিষ্যতকে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
৮। স্বকীয়তা সম্পন্ন হয়ে উঠুন : আমাদের শুধু একটিই জীবন। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আমাদের কাজে লাগাতে হবেঅন্যকে যেমন ভালবাসতে হবে তেমনি এটিও স্মরণে রাখতে হবে যে, নিজের চেয়ে বেশী কেউ আমাদেরকে ভালবাসতে পারে না। যে কাজটি করা সঠিক হবে এবং যেটি করা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি করার জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। নিজের প্রতি যদি কোনো অপরাধবোধ কাজ করে তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে জানতে হবে এবং এটিই একটি নতুন সূচনা সৃষ্টি করবে।
৯। শরীরের যত্ন নিন: শারীরিক ও মানসিক ভাবে ফিট থাকা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন নুন্যতম ৩০ মিনিটের ব্যায়াম এবং ২০ মিনিটের মেডিটেশন আমাদের পেশী সুগঠিত করতে এবং বিপাক ক্রিয়াকে সচল রাখতে দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।মেডিটেশন আত্মার উন্নয়নে সহায়ক।ব্যায়াম বা শরীরচর্চা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো অভ্যাস। এক্ষেত্রে শারিরীক ও মানষিক ব্যায়াম দুইটারই কাজ করে মুসলিম সমাজের নামাজ। একইভাবে অন্যান্য ধর্মের প্রার্থনাও মেডিটেশন এর কাজ করে।
১০। নিজের জীবনধারা পর্যবেক্ষণ করুন এবং ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন: নৈতিক ভাবে সঠিক পথে চলা ব্যক্তিরাই সাফল্যকে সবচেয়ে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেন। অর্থহীন কাজে আমাদের সময়ের অপচয় করা উচিত নয়। ব্যায়াম করার পাশাপাশি তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত খাবারগুলোও আমাদের বর্জন করতে হবে। নির্ঘুমতার সমস্যা এড়াতে যথাসময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।
১১। উপযুক্ত পদক্ষেপ নিনঃ আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও সুশৃঙ্খল জীবন যাপন পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের যথার্থ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। প্রতিদিন আমাদের কর্মপন্থাকে পর্যবেক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন করতে হবে।
১২। উপার্জন করুন: আপনি যা করতে ভালবাসেন, তাই করার জন্য এবং একটি স্বাধীন জীবন যাপনের মূল উৎস হল অর্থ। অর্থ আমাদের স্বপ্ন গুলোর বাস্তবায়ন ও ইচ্ছাগুলো পূর্ণ করার সুযোগ সৃষ্টি করে।
১৩। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন এবং শক্তিশালী যোগাযোগের মাধ্যম গড়ে তুলুনঃ সফল ও যোগ্য ব্যক্তিরা আমাদেরকে আরো শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। তাই আমাদের এই ধরনের সফল ও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
১৪। মানুষের সেবা করুনঃ আমাদের জীবনের অর্জন তখনই পরিপূর্ণতা অর্জন করবে, যখন আমরা এই আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিবো এবং অপরের দুঃখ, কষ্টকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবো। সমগ্র বিশ্বকে নিজের পরিবারের মতই ভালবাসতে হবে এবং এই পৃথিবীকে সবার বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে অবদান রাখতে হবে।
ভালকে ভাল বলা এবং চর্চা করা একান্ত প্রয়োজন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.